(এই লেখাটি পড়ার আগে প্রথম ভাগটি পড়ে নিলে পাঠকের বুঝতে সুবিধা হবে। তার জন্যে লিংকে ক্লিক করুন https://www.scienceandarguments.com/post/symmetry)
প্রতিসাম্যের এবং ভগ্ন প্রতিসাম্যের গুরুত্ব প্রকাশের জন্যে একটি বিষয়কে এখানে টেনে আনার প্রয়োজন বোধ করছি। পদার্থবিজ্ঞানের প্রগতির ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব যে আজ অপরিসীম তা হয়ত বলার আর প্রয়োজন হবে না। সিমেট্রি আজ চারিদিকেই ছড়িয়ে আছে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিভাগে। রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যা আর গণিততো অবশ্যই তার মূল বিচরণ ক্ষেত্র। এমনকি বিবর্তন মতবাদের সাথেও এর গুরুত্বপূর্ন সংযোগ স্থাপন করা যেতে পারে। চার্লস ডারউইন যখন বিবর্তন মতাবাদটি প্রকাশ করেন, সেই সময় তাঁর মতবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকেই এসেছিল, তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হলেও। ডারউইনের বৈপ্লবিক মতবাদের সর্বান্তকরণে গ্রহণের একটি মূল বাঁধা ছিল সেই সময়ের বিজ্ঞান ধারণা। শুধুমাত্র চার্চ বা সমাজের অন্য ধারার মানুষ যে শুধু, তাঁর মতবাদকে মেনে নিতে চান নি, তা বলা ঠিক হবে না। তখন পদার্থবিদ্যায় নিউটনের ডিটারমিনেজিম বা গাণিতিক পরিণামবাদ একেবারে রমরমে ব্যাপার। মানে পদার্থবিদ্যায় সমস্ত ঘটনাই ঘটে কার্য-কারণবাদী নিয়ম মেনে। সেখানে হঠাৎ করে কোনো কিছু ঘটার সম্ভাবনা নেই। তাই হঠাৎ করে কিছু পরিবর্তনেরও কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলত ডারউইনবাদ সহজে একদল দার্শনিক কিছুতেই মেনে নেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না। কিন্তু বিষয়টিকে আমরা পদার্থবিদ্যার দশার পরিবর্তনের সাথে যদি তুলনা করি তাহলে হঠাৎ করেই নির্জীব পদার্থের যে ধর্ম পরিবর্তন হতে পারে তা মেনে নিতে খুব একটা অসুবিধা হবার কথা নয়। স্পন্টেনিয়াস সিমেট্রি ব্রেকিং বা স্বতঃস্ফূর্ত ভগ্ন প্রতিসাম্য নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে আর কোনো অসুবিধাই নেই। পদার্থের বিভিন্ন দশার পরিবর্তন যে স্বতঃস্ফূর্ত ভগ্ন প্রতিসাম্যরই একটি ফলাফল তা আজ আর বুঝতে অসুবিধা হয় না। পদার্থের দশার পরিবর্তন ঘটা মানে একটি দশা থেকে সম্পুর্ন নতুন একটি দশার আবির্ভাব। সেক্ষেত্রে কার্য-কারণবাদী নিয়মকে আর না মেনে নিলেও চলে। যদি ভেবে দেখা যায় জলের, ধাতুর অথবা চুম্বকের দশার পরিবর্তন হল তাপমাত্রা কমানোর সাথে। জল বরফে পরিণত হল, সাধারণ পরিবাহী অতিপরিবাহীতে, কোনো সাধারণ তরল অতিতরলে আর চুম্বকের ক্ষেত্রে প্যারাম্যাগনেট ফেরোম্যাগনেটে পরিণত হল তাপমাত্রা কমানোর সাথে। এই ঘটনাগুলো কিন্তু হঠাৎ করেই একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার নীচে গিয়ে ঘটল। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় বা গণিতের ভাষায় আমরা বলব তার সিমেট্রি বদলে গেলো। কিন্তু কেউ জলকে দেখে প্রাথমিক ভাবে কি বুঝতে পারবেন তাপমাত্রা কমালে এর থেকে বরফ হতে পারে। লোহা তাপমাত্রা কমালে প্যারাম্যাগনেট দশা থেকে ফেরোম্যাগনেটে পরিবর্তিত হবে, অথবা অতিতরল, বা অতিপরিবাহী এদের ক্ষেত্রেও কি অনুমান করা সম্ভব সাধারণ পরিবাহী থেকে এদের দশার পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু দশার পরিবর্তন এখানে হঠাৎ করেই ঘটে, এবং অতি স্বল্প তাপমাত্রার পরিবর্তনে বা চাপের পরিবর্তনেই তা ঘটে থাকে। তাই স্বতঃস্ফূর্তভাবেই ঘটনাটি ঘটে থাকে। ডিটারমিনেজিম বা গাণিতিক পরিণামবাদ এখানে কিন্তু খাটে না। যাই হোক এ গেল বিজ্ঞানের এবং দর্শনের কথা। এইবারে ভগ্ন প্রতিসাম্যের একটু গভীরে প্রবেশ করে দেখি। বিষয়টিকে আমরা বুঝতে পারি কিনা!
রাশিয়ান পদার্থবিদ লেভ লান্দাও প্রথম অনুধাবন করেন পদার্থের কোনো দশার পরিবর্তন করা মানে সেই পদার্থের প্রতিসাম্যেরও পরিবর্তন হবে। বর্তমানের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এটা বলা যায়, এই বাক্যটি অবশ্য সমস্ত ক্ষেত্রে সঠিক নয়, সংশোধনের পরে সঠিক বাক্যটি হওয়া ভালো পদার্থের প্রতিসাম্যের পরিবর্তন হওয়া মানেই সেই পদার্থের দশার পরিবর্তন হওয়া। লেভ লান্দাও পদার্থবিদ্যার বিভিন্ন বিভাগে মূলত তাত্ত্বিক গবেষণার ক্ষেত্রে অসাধারণ কিছু অবদান রেখে গিয়েছেন। তার মতবাদগুলোকে কাজে লাগিয়ে পদার্থের বিভিন্ন দশার পরিবর্তনকে জানতে এবং বুঝতে অনেক সুবিধা হয়। লান্দাও প্রথম যে ধারণাটি আনেন, তা হল যখন পদার্থের বিভিন্ন দশার পরিবর্তন হয়, সেই দশার পরিবর্তনের সাথে সেই নতুন দশাতে একটি নতুন প্যারামিটার বা স্থিতিমাপেরও উৎপত্তি হয়। যা কিনা পদার্থের পূর্ববর্তী দশায় মজুত ছিল না। একে পদার্থবিদ্যার টেকনিক্যাল ভাষায় বলা হয় অর্ডার প্যারামিটার। যেমন গ্যাস থেকে তরল থেকে কঠিন, সাধারণ পরিবাহী থেকে অতিপরিবাহী, চুম্বকের ক্ষেত্রে প্যারাম্যাগনেট থেকে ফেরোম্যাগনেট বা এনটিফেরোম্যাগনেট, অথবা নেমাটিক লিকুইড (তরল) ক্রিস্টাল থেকে লিকুইড (তরল), অথবা ফেরোইলেকট্রিক থেকে নন-পোলার ক্রিস্টাল এই সমস্ত ক্ষেত্রেই তাপমাত্রা কমানোর সাথে যখন এক দশা থেকে অন্য দশাতে পদার্থটি পরিবর্তিত হয়, সেই পরিবর্তনের সাথে জড়িত থাকে একটি অর্ডার প্যারামিটার বা অর্ডার স্থিতিমাপ। বিভিন্ন দশার ক্ষেত্রে অর্ডার স্থিতিমাপ আবার বিভিন্ন হয়। সেই অর্ডার প্যারামিটারগুলোকে কি বলা হয় সেই সংক্রান্ত টেকনিক্যাল শব্দগুলো আর এখানে প্রয়োগ করা হল না। যারা ইচ্ছুক তাঁরা অন্য কোনো অগ্রবর্তী লেখার সাহায্য নিতে পারেন। অর্ডার স্থিতিমাপের মাপ তাপমাত্রা কমানো এবং বাড়ানোর সাথে পরিবর্তিত হয়, এবং যখন পুরো সিস্টেমটি নতুন একটি দশায় পরিবর্তিত হয়, তখন সেই অর্ডার স্থিতিমাপের মান হয় সর্বাধিক। অর্ডার স্থিতিমাপ তাপমাত্রার সাথে কীভাবে পরিবর্তিত হবে তা জানতে সাহায্য করে কীভাবে সেই দশারও পরিবর্তন হচ্ছে এবং সেই সংক্রান্ত পদার্থের আণুবীক্ষণিক অনেক ধর্ম। লান্দাও বুঝেছিলেন পদার্থের বিভিন্ন দশাকে যথাযথ বর্ণনা করতে হলে, মাইক্রোসকপিক তত্ত্বের কথা বেশি না ভাবলেও চলবে, মানে প্রতিটি অণু পরমাণু একে অন্যের সাথে কীভাবে আকর্ষণ বিকর্ষণ করছে সেই সূক্ষ্ম ধারণা না থাকলেও চলবে, পরিবর্তে অর্ডার স্থিতিমাপ, এবং তার সাথে জড়িয়ে থাকা সিমেট্রি বা প্রতিসাম্যের যুক্তি খাঁড়া করতে পারলে, সেই দশাকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হতে পারে। মোদ্দা কথা কী করে পদার্থের একটি দশার সিমেট্রি পরিবর্তিত হল, অন্য একটি দশাতে এসে, তা থেকেই অনেক জটিল তথ্য বার করা সম্ভব হবে। সিমেট্রির যুক্তি সঠিক ভাবে প্রয়োগ করা হলেই পদার্থের বিভিন্ন দশার পরিবর্তনকে জানতে অনেক সুবিধা হবে। তাই পদার্থবিদ্যায় কঠিন পদার্থের ক্ষেত্রে দশার পরিবর্তন এবং নিম্ন তাপমাত্রার বিভিন্ন দশাকে বুঝতে সিমেট্রি ব্রেকিং বা ভগ্ন প্রতিসাম্য হয়ে ওঠে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ন।
বিষয়টিকে সহজ অথচ দৈনন্দিন জীবনের একটি ঘটনা দিয়ে বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে। জলের আছে তিনটি দশা, গ্যাস, তরল এবং কঠিন (বরফ)। নিচের ছবিতে গ্যাস, তরল এবং কঠিন পদার্থের একটি স্কিম্যাটিক দেখানো হয়েছে। ছবিটি দেখে প্রথমে মনে হতেই পারে, বা আমাদের স্বাভাবিক চিন্তা থেকে মনে হতেই পার, গ্যাসীয় দশায় পদার্থটির প্রতিসাম্যতা কম, কেমন এলোমেলোভাবে গ্যাসের কনাগুলো আছে, সেখানে কোনোই প্রতিসাম্যতা বজায় নেই। কিন্তু তাপমাত্রা কমালে গ্যাসের দশার পরিবর্তন হয়ে তরল দশায় আসে, তখন দেখে মনে হয় তার প্রতিসাম্যতা যেন বেড়ে গেল, এবং কঠিনে পরিণত হলে একটি কেলাসে যেহেতু প্রতিটি অণু অত্যন্ত সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো থাকে তাই গ্যাসীয় দশা থেকে কঠিন দশায় আসলে বস্তুটির প্রতিসাম্যতা বৃদ্ধি পায়। এটাই আপাত দৃষ্টিতে আমাদের সকলের মনে হতে পারে। বাস্তব ঘটনা কিন্তু হল আলাদা। একটি বদ্ধ পাত্রে যখন গ্যাসকে রাখা হয়, সেই গ্যাসের অসংখ্য অণুগুলো এদিকে ওদিকে গ্যাসের
তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে ছোটাছুটি করে। কোনো একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে পাত্রে আবদ্ধ সেই গ্যাসকে আমরা যখন দেখি, তখন তাকে আমরা যেভাবেই দেখি না কেন, যে দিক থেকেই দেখি না কেন, তাকে সব দিক থেকেই একই দেখতে লাগবে। আমাদের দেখার সাপেক্ষে, একটি গ্যাস অণুর সাপেক্ষে অন্য একটি গ্যাস অণুকে একই দেখতে লাগবে। প্রতিসাম্যের বিচারে আমরা গ্যাসকে যখন দেখি তখন গ্যাসের একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে আমরা যেভাবেই গ্যাসকে দেখি না সে কিন্তু সমানই থাকবে। ঠিক একইভাবে কোনো একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে আমরা যদি ঘূর্ণন ঘটাই, সেক্ষেত্রেও গ্যাসের প্রতিটি কণাকে তার প্রাথমিক এবং অন্তিম দশার মধ্যে পার্থক্য করা যাবে না, গ্যাসটি সামগ্রিকভাবে তার প্রতিসাম্যতা বজায় রাখবে এই সমস্ত পরিবর্তনের পরে। টেকনিক্যাল ভাষায় বললে বলা হবে গ্যাসের ক্ষেত্রে ট্রান্সলেশ্নাল বা স্থানান্তরণের এবং রোটেশনাল বা ঘূর্ণনের দুটি প্রতিসাম্যই বজায় থাকে। সেই গ্যাস (বাষ্প) যখন তরলে (জলে) পরিণত হয়, সেক্ষেত্রেও তার প্রতিসাম্যের কোন বিঘ্ন ঘটে না। মানে স্থানান্তরণের এবং ঘূর্ণনের প্রতিসাম্যতা সেখানেও বজায় থাকে। যেদিক থেকেই আমি সেই জলকে দেখি, কোনো একটি নির্দিষ্ট অক্ষের আবশ্যকতা নেই, সমস্ত অক্ষের সাপেক্ষেই সে প্রতিসম। কিন্তু সেই তরলই (জল) যখন আবার কঠিনে (বরফ) পরিণত হয়, তখন কিন্তু বিষয়টি অনেকটাই আলাদা হয়। কঠিন পদার্থে তার অণুগুলো কেলাসে সারিবদ্ধভাবে সাজানো থাকে। একটি রেখাতে একটি অণু থেকে আরেকটি অণু একটি নির্দিষ্ট দূরত্বেই অবস্থান করে, এখানে স্থানান্তরণের প্রতিসাম্য বর্তমান, কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট মানের উপর তা নির্ভর করে। মানে কেলাসের একটি অণু থেকে অন্য আরেকটি অণুতে আসতে হলে তাকে কিছু একটি সংখ্যা দিয়ে গুন করতে হবে, প্রথম এবং দ্বিতীয় অণুর দূরত্বের সাথে, তার পরের অণুতে পৌঁছতে গেলে আবার আরেকটি সংখ্যা দিয়ে গুন করতে হবে। কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যার গুনিতক হিসেবেই তার স্থানান্তরণের প্রতিসাম্য বজায় থাকবে। এখানে হয়ে গেল এক ধরণের ডিসক্রিট প্রতিসাম্য। তাহলে যেটা ঘটল তরল দশায় যেখানে যেদিকে ইচ্ছে যেরকম, সেরকম স্থানান্তরণের প্রতিসাম্যতা বজায় ছিল, সেখানে কঠিন পদার্থে তার প্রতিসাম্য কিছুটা বিঘ্নিত হল। আবার অন্যদিকে কেলাসটিকে যে কোনো অক্ষের সাপেক্ষে যদি ঘোরানো হয়, তাহলে তা কিন্তু আর এক থাকবে না। কিছু নির্দিষ্ট কোনে ঘোরালে তবেই তার প্রাথমিক এবং অন্তিম দশাকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যাবে না। এখানে দেখা গেল যেখানে তরল বা গ্যাসে যেকোনো অক্ষের সাপেক্ষে তাকে ঘোরালেও সে একই থাকছে, কঠিন পদার্থের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট মানের কোনের ঘূর্ণনের পরেই তার প্রাথমিক এবং অন্তিম দশার মধ্যে আর পার্থক্য করা যায় না। সাকল্যে কঠিন পদার্থের ক্ষেত্রে ঘূর্ণনের প্রতিসাম্য বজায় থাকলেও তার কিছু সীমাবদ্ধতা থেকে গেল। তাই তার প্রতিসাম্যও আংশিক বিঘ্নিত হল। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি জল এবং বাষ্প দশায় তার প্রতিসাম্যতা বেশি ছিল, কিন্তু তাপমাত্রা কমানোর ফলে বরফ দশায় এসে তার প্রতিসাম্যতা কমে গেল। একেই বলা হয় পদার্থবিদ্যায় সিমেট্রি ব্রেকিং বা ভগ্ন প্রতিসাম্য। এই আলোচনা থেকে যে বিষয়টি পরিস্কার তা হল, ভগ্ন প্রতিসাম্য মানেই তার সাথে বিজড়িত হয় কোনো দশার পরিবর্তন। সহজ উদাহরণটি ছিল গ্যাস, তরল এবং কঠিন পদার্থের জন্যে। ঠিক একই ভাবে বিষয়টিকে আমরা তুলনা করতে পারি পদার্থের চুম্বক ধর্মের সাথেও।
বামদিকের চিত্রে প্রদর্শিত একটি ঊর্ধ্বতন প্রতিসম বস্তু (হায়ার সিমেট্রিক অবজেক্ট) এবং ডানদিকে দেখানো হযেছে নিম্নতর প্রতিসম বস্তু (লোয়ার সিমেট্রিক অবজেক্ট)। ডানদিকের চিত্র বোঝায় স্পিনের ফেরোম্যাগনেটিক দশা। একই অভিমুখে স্পিনগুলি সজ্জিত। আর বামদিকের চিত্র বোঝায় উচ্চ তাপমাত্রায় স্পিনের ডিসঅর্ডার বা বিশৃঙ্খল দশা। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতেই পারে বামদিকের দশাটি প্রতিসাম্যতা কম। কারণ কীভাবে এলোমেলো ভাবে স্পিনগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, এদের মধ্যে কোনোই শৃঙ্খল নেই। বিষয়টি একভাবে ভাবলে তাই, স্পিনগুলির মধ্যে সত্যিই কোনো শৃঙ্খল নেই বা কোরিলেশন নেই। তাবলে এই নয় যে এ নিম্নতর প্রতিসম সিস্টেম। কি গুলিয়ে যাচ্ছে তাই না! না গোলানোর কিছু নেই। পরিবর্তে যদি বিষয়টি এইভাবে ভাবি, বামদিকের সিস্টেমটিকে আমরা যেভাবেই দেখি না কেন, যেভাবেই ঘোরাই না কেন, একটি স্পিনের সাপেক্ষে অন্য একটি স্পিন সময়ের কোনো এক মুহূর্তে সিস্টেমটি প্রতিসম। ঠিক যেভাবে আমরা গ্যাসের ক্ষেত্রে ভাবতে পারি। যেভাবেই গ্যাসের একটি অণুকে দেখি না কেন, যেভাবেই ঘুরিয়ে দেখি না কেন, গ্যাসের অণুগুলো প্রতিসাম্যতা বজায় রাখছে। কিন্তু চুম্বকের ক্ষেত্রে যখন বিশৃঙ্খল দশা থেকে শৃঙ্খল দশায় এল, সেক্ষেত্রে প্রথম যে দশা ছিল তার থেকে পরিস্থিতি বেশ এবারে বদলে গেল। বিশৃঙ্খল দশা বলতে এখানে বলা হচ্ছে প্যারাম্যাগনেটিক দশা। এই দশাতে সমস্ত স্পিনগুলোকে একটি নির্দিষ্ট কোনে ঘোরালেও সিস্টেম সেই প্যারাম্যাগনেটই থাকে। ফেরোম্যাগনেটিক দশার ক্ষেত্রে বিষয়টি আর এক থাকে না। যে কোনো একটি কোনে ঘোরালে তাকে কিছুটা অন্যরকমই দেখতে লাগে।
একইভাবে যদি চুম্বকের এন্টিফেরোম্যাগনেটিক দশার কথা বলি, যা ডানদিকের চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে পাশ্ববর্তী একটি স্পিনের অভিমুখ ঠিক উল্টো দিক একে অন্যের সাথে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে আছে।
এইভাবে স্পিনগুলি সজ্জিত থেকে ম্যাগনেটিক দশা তৈরি করে। এক্ষেত্রেও আমরা দেখতে পাই পুরো সিস্টেমকে কিছুটা ঘুরিয়ে দিলে সিস্টেমটি আর আগের মতন থাকে না। সিস্টেমের প্রতিসাম্যতার পরিবর্তন ঘটেছে। মূল কথা দশার পরিবর্তনের সাথে সিস্টেমের প্রতিসাম্যতা কমেছে। তবে শুধু জলের, চুম্বকের দশার পরিবর্তন নয়, অতিপরিবাহী, অতিতরল দশাকে বোঝার জন্যেও কাজে লাগানো যেতে পারে ভগ্ন-প্রতিসাম্যের ধারণা।
এই অবধি আমাদের আলোচনা থেকে এটা অন্তত আমরা বুঝেছি প্রতিসাম্য ভেঙে যাওয়া মানেই বা কমে যাওয়া মানেই পদার্থের দশার পরিবর্তন হয়। কিন্তু শুধু কি তাই, না আরও কিছু পরিবর্তন ঘটে থাকে পদার্থের। ভগ্ন-প্রতিসাম্যের ফলাফল হিসেবে কঠিন পদার্থে মূলত চারটি জিনিসকে ধরা যায়। আর বাকি সবই এর উপর ভিত্তি করে বর্ণনা সম্ভব। সেই চারটি জিনিস যথাক্রমে ১) দশার পরিবর্তন, ২) রিজিডিটি বা অনমনীয়তা, ৩) এক্সাইটেশন বা উত্তেজনা এবং ৪) ডিফেক্ট বা খুঁত। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় আমরা আপাতত গেলাম না, শুধু পাঠকদের জানানো হল ভগ্ন-প্রতিসাম্যের ফলাফল হিসেবে কঠিন পদার্থে দশার পরিবর্তন ছাড়াও আর কী কী ঘটে থাকে। চলবে…………
コメント